বিনোদন ডেস্ক:
বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশনধর্মী নায়ক জসিমের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন বাংলার এই জনপ্রিয় নায়ক।
জসিম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। জসিম ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
জসিম একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক,ফাইট পরিচালক ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অনেকেই তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা আজিমের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে পা দেন । তবে নায়ক হিসেবে রুপালি পর্দায় ধরা দেন ‘মোকাবেলা’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
তাঁর শুরুটা হয়েছিল খলনায়কের চরিত্র দিয়ে। এরপর দেশের জনপ্রিয় নায়ক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে আজও তিনি কিংবদন্তি। নন্দিত এই কিংবদন্তির মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৮ অক্টোবর। ১৯৯৮ সালের আজকের এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন।
উল্লেখ্য,দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ সিনেমাতে প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। ‘দোস্ত দুশমন’ হিন্দি ‘শোলে’ সিনেমার রিমেক। এখানে জসিম গব্বর সিং-য়ের খলনায়ক চরিত্রটি রুপদান করে ব্যাপক আলোচিত হন। এরপর খলনায়ক হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন একক রাজত্ব করেন ঢালিউডে।
তারপর বেশ কয়েক বছর পর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় আশির দশকের প্রায় সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতেই অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা-রোজিনা এর সঙ্গে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যেত।
জসিম অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন;- ‘রংবাজ’, ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’,‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘লাল গোলাপ’, ‘দাগী’, ‘টাইগার’,‘হাবিলদার’, ‘ভালোবাসার ঘর’ প্রভৃতি সুপারহিট সিনেমা দিয়ে। সবমিলিয়ে প্রায় দুই’শ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্লখ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন । জসিমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল, সামি । যার মধ্যে রাতুল ও সামি 'ওউনড' ব্যান্ডের বেজিস্ট ও ড্রামার আর রাহুল 'ট্রেইনরেক' ব্যান্ডের গিটারিস্ট।
জসিম ১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পরলোকগমন করেন। জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তাঁর নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়।
সিলেট ২৪ বাংলা/এসডি.