থেমে নেই দুর্গা পূজার নবনির্মিত প্রতিমা ভাঙচুর

ময়মনসিংহে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর;প্রশাসন আশ্বাস দিয়েই দায় সারছে

প্রকাশিত: ১১:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪

সত্যজিৎ দাস:

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরে গোবিন্দবাড়ি জিউর মন্দিরে নির্মাণাধীন দেবী দুর্গা’র প্রতিমা ভাঙচুরের সাথে সম্পৃক্ত ইয়াসিন (২০) নামে এক যুবককে আটক করেছে গৌরীপুর থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর রাতে প্রতিমা ভাঙচুরের সময় তাকে হাতেনাতে ধরার পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন। আটককৃত যুবক ইয়াসিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে।

আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে নবনির্মিত দেবী দুর্গার প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গোবিন্দ জিউর বাড়ি মন্দির এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ জানান;’ ঘটনার দিন ভোর রাত ৪টার সময় ডলি রাণী দাস (৪৫) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে প্রতিমা ভাঙ্গার ঘটনাটি দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন।

বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো শারদীয় দুর্গা পূজা। এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোতে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দুদের পূজা পার্বণ নিয়ে হামলা,হত্যা, ভাঙচুরের ঘটনা তেমন ঘটেনা। তবে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্নভাবে করা হয় নির্যাতন,হত্যা, গুম,ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ,ধর্ষণ,লুটপাটের মতো ঘটনা।

এতোবছর ধরে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর এগুলো চলেই আসতেছে,এগুলো যেনো এক ট্র্যাডিশনে রুপ নিয়েছে।

এদিকে সরকার তথা বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রশাসনের আশ্বাসই যেনো সার। দুর্গা পূজা এগিয়ে আসতেই এই ট্র্যাডিশন মেনে শুরু হল প্রতিমা ভাঙচুর। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গোবিন্দ জিউর মন্দিরে দুর্গা পূজা উপলক্ষে নির্মীয়মান তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে নেমে এক যুবককে গ্রেফতার করলেও,এলকার হিন্দুদের হাতে আটক হয় এক মুসলিম ছেলে। যদিও প্রতিমা ভাঙার দায় এড়াতে ধৃত যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করছেন গৌরীপুর থানার ওসি মির্জা মাযহারুল আনোয়ার।

অন্যদিকে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় গৌরীপুর সহ ময়মনসিংহের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পূজার সময়ে আবারও হামলা হতে পারে বলে আতংকিত সকলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,প্রতি বছরই গৌরীপুরের গোবিন্দ জিউর মন্দিরে জাঁকজমকভাবে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। মন্দির চত্বরেই মৃৎশিল্পীদের দিয়ে প্রতিমা বানানো হয়। এ বছরের পুজার জন্য প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাটি শুকানোর পরে রঙের কাজ চলছে। এমন সময় ভোর চারটার দিকে ইয়াসিন নামে এক যুবক মন্দিরে ঢুকে তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করে।

এরপরে একটি প্রতিমা কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজন তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন বাবু পুজার কয়েকদিন আগে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,’আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলেমিশে বসবাস করতে চাই। উপজেলার সবচেয়ে বড় পুজার জন্য তৈরি করা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। হামলাকারীর পিছনে যারা ইন্ধন যুগিয়েছে,তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’

প্রতিমা ভাঙচুরের পিছনে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করে মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জিত সাহা বলেন,’দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে একটি গোষ্ঠী মন্দিরে হামলা করে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। এদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মহোদয়ের নিকট।’ এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্তেজনা প্রশমনে সুষ্ঠ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন গৌরীপুর থানার ওসি।

প্রসঙ্গত,গত ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের গলাচিপা গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।মন্দিরটির সভাপতি বিপুল সমাদ্দার ডয়চে ভেলেকে জানান,‘‘রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সকালে মন্দিরে গেলে বিষয়টি নজরে আসে৷ পরে সবাইকে জানানো হয়। এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। চার-পাঁচটি প্রতিমা ভাঙা হয়েছে।”

তিনি বলেন,‘‘আমরা থানায় অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করে মামলা করেছি৷ কিন্তু এখানো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের নিরপত্তার আশ্বাস দিয়েছে৷ কিন্তু আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না ”

বিপুল সমাদ্দার জানান,‘‘এখন যে প্রতিমাগুলো ভাঙা হচ্ছে সেগুলো নির্মাণের শেষ পর্যায়ে। এখন নতুন করে প্রতিমা নির্মাণ বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।”

সিলেট ২৪ বাংলা/এসডি.