**বাংলা ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি: ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূচনা**
আজ ১ ফেব্রুয়ারি, বাঙালির ভাষার মাসের সূচনা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকার রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি পেয়েছিল মাতৃভাষার মর্যাদা এবং ভাষাভিত্তিক জাতীয় পরিচয়। এই মাসটি বাঙালির কাছে শুধু ভাষার মাসই নয়, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ারও মাস।
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দিন হিসেবে পালিত হয়।
**ভাষা আন্দোলনের পটভূমি**
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ, পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক সভায় ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু- অন্য কোনও ভাষা নয়।’ তার এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায় বাঙালি ছাত্রসমাজ। কার্জন হলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলার পর কয়েকজন ছাত্র ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন, যা জিন্নাহকে অপ্রস্তুত করে।
এর আগেই ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ও অধ্যাপক মিলে ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে নানা সভা-সমিতির আয়োজন করেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়।
**১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি: রক্তঝরা অধ্যায়**
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকসহ নাম না জানা অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা। এই আন্দোলন পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা হয়ে ওঠে।
**ফেব্রুয়ারি মাসের কর্মসূচি**
ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। বইমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও স্মরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম বৃহৎ আয়োজন।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বের সকল মাতৃভাষাপ্রেমীর জন্য গৌরবের। এই মাসে আমরা স্মরণ করি সেই সব বীর শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি।