Rodri-Ballon D’OR: রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয়, স্পেনের গৌরবের এক নতুন অধ্যায়

প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৪
রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয়, স্পেনের গৌরবের এক নতুন অধ্যায়
খেলাধুলা ডেস্কঃ

তার পায়ের স্পর্শে বল জাদু করত। মাঠে তার প্রতিটি পাস ছিল এক নিখুঁত কৌশল। কিন্তু প্যারিসের ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানে রদ্রিকে দেখে সারা বিশ্ব চমকে উঠল। ক্রাচে ভর করে মঞ্চে উঠে আসা এই খেলোয়াড়ের চোখে এক বিজয়ী হাসি।

প্যারিসের জমকালো অনুষ্ঠানে যখন ক্রাচে ভর করে রদ্রি মঞ্চে উঠলেন, তখন সবাই তাকিয়ে রইল। একজন আহত খেলোয়াড়ের এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি সকলকে মুগ্ধ করেছিল। ৬৪ বছর পর একজন স্প্যানিশ খেলোয়াড় ব্যালন ডি’অর জিতে স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যোগ করেছেন।

ম্যানচেস্টারের নীল আকাশেও রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয়ের উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে পড়েছে। ৬৪ বছর পর একজন স্প্যানিশ খেলোয়াড় এই পুরস্কার জিতেছেন, যা স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে একটি স্বর্ণাক্ষর। স্পেনের কিংবদন্তি লুইস সুয়ারেজ যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো তিনিও তাঁর দেশের এই গৌরবের সাক্ষী হতে পারতেন।

রদ্রি নিজেকে খুব সাধারণ একজন মানুষ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই এবং তাকে অনেকে চিনে না।

অন্যদিকে, স্পেনের কোচ মনে করেন, রদ্রি ব্যালন ডি’অর জিতার দাবিদার।

স্পেন ইউরো জেতার পর থেকেই স্পেনের কোচ রদ্রিকে ব্যালন ডি’অর জিততে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, ব্রাজিলের সমর্থকরা ভিনিসিয়ুসকে এই পুরস্কারের প্রধান দাবিদার মনে করতেন। তবে, ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ ১০০ দেশের সাংবাদিকদের ভোটে রদ্রিই বিজয়ী হয়েছেন। এতে ভিনিসিয়ুসের ভক্তরা হতাশ হলেও, সাংবাদিকরা তাদের ভোট দিয়ে রদ্রির অসাধারণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি দিয়েছেন। 

রদ্রিকে স্পেনের ইউরো জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’ বলা হলেও অনেকে হয়তো এই বিষয়টির গভীরতা বুঝতে পারেন না। কেননা, তার ভূমিকা এতই সূক্ষ্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ যে তা কেবল খেলা দেখে বুঝা যায়। হ্যাঁ, রদ্রির পরিসংখ্যান অসাধারণ। পুরো টুর্নামেন্টে ৫২১ মিনিট খেলে তিনি প্রায় ৯৩% সফল পাস দিয়েছেন, যা একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের জন্য অবিশ্বাস্য। শেষ ষোলোতে জর্জিয়ার বিপক্ষে তার করা গোল স্পেনকে জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু এই সংখ্যাগুলো তার প্রকৃত মূল্যের একটা অংশ মাত্র। রদ্রি মাঠের মধ্যে ছিলেন যেন একজন অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টর। তার পাস, তার পজিশনিং, তার দৃষ্টিভঙ্গি – সবকিছুই দলের খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করত। তিনি ছিলেন দলের হৃদয়। পর্দার আড়ালে থেকে নিরবচেপে কাজ করতেন, কিন্তু তার প্রভাব মাঠের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ত। রদ্রি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন কারণ তিনি শুধু একজন ভালো ফুটবলার নন, তিনি একজন নেতা, একজন ইনস্পিরেশন। তার পারফরম্যান্স স্পেনের ইউরো জয়ে একটি মূল ভূমিকা পালন করেছে এবং তিনি নিজেকে ফুটবল জগতের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসাবে প্রমাণ করেছেন। রদ্রি দলকে একত্রিত করা, পাসের নির্ভুলতা, গোল করার ক্ষমতা এবং দৃঢ়তা – এই সব গুণাবলীর সমন্বয়ে একজন সফল ফুটবলার হয়ে উঠেছেন। অন্য অনেক খেলোয়াড়ের মতো রদ্রি গোল করতে পারেন, পাস দিতে পারেন, বা ডিফেন্ড করতে পারেন। কিন্তু রদ্রিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে তার দলকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা এবং দৃঢ়তা। তিনি মাঠের মধ্যে একজন সেনাপতির মতো কাজ করেন।

রদ্রির ব্যালন ডি’অর জয় সত্যিই বিস্ময়কর। শুধুমাত্র রদ্রি নয়, তার কোচ পেপ গার্দিওলাও নিশ্চয়ই এই জয়কে এক বিশেষ উপহার হিসেবে নিয়েছেন। গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটিতে রদ্রি কী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন তা সবারই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর মতো। মাঠের প্রতিটি অংশে তার উপস্থিতি ছিল অনুভূত। রক্ষণে দৃঢ় প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও আক্রমণের সূত্রপাত করতেন তিনি। তার খেলা দেখে মনে হতো যেন তিনি কোনো মেশিন, যে কখনো থামেন না।

স্পেনের জাতীয় দলেও রদ্রির এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা গেছে। নিষ্ঠা ও বুদ্ধিমত্তার অদ্ভুত মিশ্রণে তিনি মাঠে নেমেছিলেন। বল হারালেও তিনি দ্রুত বল কেড়ে নিয়ে আবারও আক্রমণে যোগ দিতেন। গত মৌসুমে সিটির টানা চতুর্থবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জয় এবং ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে রদ্রির অবদান অনস্বীকার্য।

একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও রদ্রি গত মৌসুমে ১৭টি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন। এটি অবিশ্বাস্য এক অর্জন। অনেকে হয়তো ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে এই পুরস্কারের জন্য উপযুক্ত মনে করতে পারেন। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। ভিনিসিয়ুস যেমন রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগা জিতাতে সাহায্য করেছেন, তেমনি রদ্রিও ম্যানচেস্টার সিটিকে একের পর এক শিরোপা জিতিয়েছেন। ভিনিসিয়ুস ৪৯ ম্যাচে ২৬ গোল করেছেন, অন্যদিকে রদ্রি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও ৬৩ ম্যাচে ১২ গোল করেছেন। এই গোলগুলোর গুরুত্ব কতটা ছিল তা স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে এবং পেপ গার্দিওলা ভালো করেই জানেন।

পাসের নির্ভুলতা, গোলের সুযোগ সৃষ্টি, ডিফেন্ডিং – প্রতিটি ক্ষেত্রেই রদ্রি ভিনিসিয়ুসকে ছাড়িয়ে গেছেন। রদ্রির ১০০টিরও বেশি সঠিক পাসের বিপরীতে ভিনিসিয়ুসের ৭০টির মতো সঠিক পাস ছিল। রদ্রি গোলের ১১টি সুযোগ তৈরি করেছেন এবং মাত্র চারবার ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে ভিনিসিয়ুস ১৯টি সুযোগ তৈরি করেছেন কিন্তু ২৬ বার ব্যর্থ হয়েছেন।

সুতরাং, পরিসংখ্যান বলছে যে রদ্রিই গত মৌসুমে সবচেয়ে সফল ফুটবলার ছিলেন। তিনি শুধু গোল করেননি, তিনি দলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং দলকে জয়ী করেছেন। ব্যালন ডি’অর তার এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্যই তাকে দেওয়া হয়েছে।

ব্যালন ডি’অর জিতে রদ্রি শুধু তার দক্ষতা প্রমাণ করেননি, তার ব্যক্তিত্বের সরলতাও সবার সামনে তুলে ধরেছেন। প্রেমিকার সাথে তার সম্পর্ক, তার নম্রতা, মাঠের মধ্যে তার নিঃশব্দ কাজ – সব মিলে তাকে একজন বিশেষ ফুটবলার করে তুলেছে। রদ্রির এই জয় শুধু তার নিজের নয়, সারা ফুটবল জগতের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি