Migrant Worker Trouble: সৌদি আরবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিকদের পরিবারের হাহাকার

প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০২৪
সৌদি আরবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিকদের পরিবারের হাহাকার

সিলেট প্রতিনিধিঃ

সিলেটের কোলাপাড়া গ্রামের আমান আলী সাত মাস ধরে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। তার দুই ছেলে, আলামিন ও আবুল কাইয়ুম, সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমান আলীর মতে, তার ছেলেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।

আমান আলী একাই নন, গত ঈদুল ফিতরে প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছিল। বিশেষ করে, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক প্রবাসী শ্রমিক রিয়াদের হারা আল-ওয়াজরাত এলাকায় একটি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

আমান আলী বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, “আমরা এখন অনেক অসহায়। জানি না কার কাছে যাব বা কে আমাদের সাহায্য করবে। কিছু লোক মারামারি করে ভিডিও বানিয়েছে, কিন্তু আমার ছেলেদের তাতে কোনো জড়িত নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলেরা জেলে খুব কষ্ট পাচ্ছে। তারা নিরীহ, তাদের দোষ নেই। দুবাইয়ের মতো আমাদের ছেলেদেরও দেশে ফিরিয়ে আনুন।”

সৌদি আরবে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের তদন্তে জানা গেছে, এই ঘটনায় ৯০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। টিবিএস ৫০ জনেরও বেশি গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকের নামের তালিকা পেয়েছে।

রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলর মুহাম্মদ রেজা-ই-রাব্বি জানিয়েছেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে সম্প্রতি কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, “এগুলো খুবই দুঃখজনক ঘটনা। একে একে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীদের দুটি ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রামীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার রূপ নেয়। শেষে ঈদের সময় এই দুই জেলার প্রবাসীদের মধ্যে আরেকটি সংঘর্ষ হয়।

গত ঈদে সৌদি আরবে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল একটি ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১১ এপ্রিল, ঈদের দিন সন্ধ্যায় হারা এলাকায় সিলেটি প্রবাসীরা একটি মিছিল করেছিল। এই মিছিলের ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবাসীরাও পাল্টা মিছিল করে।

সিলেটের একজন প্রবাসী বুখারির কথা অনুযায়ী, এই সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল একটি ডাকাতির ঘটনা। এই ঘটনায় সিলেটের একজন ব্যক্তি ভুক্তভোগী হয়েছিলেন এবং অভিযুক্ত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন ব্যক্তি। এই ঘটনার জের ধরে দুই জেলার প্রবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং তারা নিজেদের লোকদের সমর্থনে রাস্তায় নামে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সৌদি আরবের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সৌদি আরবে ঈদের রাতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ব্যাপক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। সিলেটের একজন প্রবাসী বুখারি জানান, “ঈদের রাতে পুলিশ আমাদের এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। আমার কাছে আকামা (বৈধতা) ছিল এবং আমার ফোনে টিকটকও ছিল না, তাই প্রথমে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে আবার ডাকা হলেও ভ্যানটি ভর্তি থাকায় আমাকে আর গ্রেপ্তার করা হয়নি।”

আরেকজন প্রবাসী শ্রমিক জুবায়ের, যিনি সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন, জানান যে তিনি ঈদের রাতে একটি পার্টিতে ছিলেন বলে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে বেঁচে যান। তিনি বলেন, “এই ঘটনার মূল কারণ ছিল আর্থিক বিষয়। একজনের কাছে অন্যজনের পাওনা ছিল।”

সৌদি আরবে বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে এই ধরনের সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রবাসীদের জীবনকে অনিরাপদ করে তুলছে।

সৌদি আরবে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিকদের পরিবারের দুর্দশা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বুখারি। তিনি জানান, তার কোম্পানির ১৬ জন শ্রমিক ও আত্মীয় এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন।

বুখারি বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা আমাকে প্রতিনিয়ত ফোন করে কাঁদছেন। বেশিরভাগ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিই কোনো সমাবেশ বা সহিংসতায় জড়িত ছিলেন না। কয়েকজনের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়া হয়েছিল, তবে বেশিরভাগই নিরীহ।”

এই পরিস্থিতি নিয়ে বুখারি বারবার দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন। তিনি দূতাবাস কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, গ্রেপ্তারকৃতরা নিরীহ এবং তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। দূতাবাস কর্মকর্তারা তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা এই বিষয়ে কাজ করছেন। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।

সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় দূতাবাস বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। তবে লেবার ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলর মুহাম্মদ রেজা-ই-রাব্বি জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওর কারণে সৌদিদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, যার ফলে বিষয়টিতে তাদের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, “সাধারণত এখানে শাস্তি বেশ কঠোর হয়, এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। তবে আমরা প্রতিনিয়ত অনুরোধ করার পর তারা আমাদের কথা বিবেচনা করেছেন। বিষয়টি আদালতে না পাঠিয়ে রিয়াদের আমিরের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমিরের অনুমোদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি দেখছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির জন্য পৃথক চিঠি ইস্যু করবে।”

৯৩ জন গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজা জানান, “এটি একক ঘটনা নয়, একাধিক ঘটনার ফলাফল।”

সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি