স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের একটি কার্গো জাহাজ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। করাচি থেকে ৩০০টি কনটেইনার নিয়ে আসা এই জাহাজ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এই আগ্রহেরই ফলশ্রুতি এই সরাসরি জাহাজ চলাচল।
পাকিস্তানের বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এই ঘটনাকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এই সরাসরি জাহাজ চলাচল দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং বাণিজ্যিক আদান-প্রদানকে আরও সহজ করবে।
১৩ই নভেম্বর, বুধবার পাকিস্তান দূতাবাসের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি পোস্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে একটি কনটেইনার জাহাজ আসার খবরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার আশা জাগলেও, বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন।
দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে এখনো সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে মূলত রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল, যেমন সুতা-কাপড়, প্রস্তুত চামড়া, সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শুঁটকি এবং মেয়েদের থ্রি-পিস আমদানি করা হয়েছে। মোট আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে প্রায় ৬ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা এবং তৈরি পোশাক।
গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে মোট ১৬ লাখ টন পণ্য আমদানি হলেও, এর মাত্র তিন লাখ টনের কম পণ্য কনটেইনারে এসেছে। শিপিং ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে মাসে গড়ে এক থেকে দেড় হাজারের বেশি কনটেইনার পণ্য আমদানি হয় না, যা একটি সম্পূর্ণ জাহাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। সে সময় এই আমদানির মূল্য ছিল প্রায় ৮০ কোটি মার্কিন ডলার। তাহলে কেন বর্তমানে বাণিজ্যের পরিমাণ কম থাকা সত্ত্বেও সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে?
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে পাকিস্তান থেকে আসা পণ্যের উপর কাস্টমস পরীক্ষার কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। আগে এই পণ্যগুলি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করতে হতো। কিন্তু গত আগস্টে এনবিআর এই নিয়মটি তুলে নেওয়ায় আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি পাবে। এই আশায়ই সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের মতে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য এখনও খুব বেশি নয়। তবে, আমদানি কার্যক্রম সহজ করার ফলে ভবিষ্যতে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এই আশায়ই কনটেইনার জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। যদিও এটি দুই দেশের মধ্যে কনটেইনার জাহাজ চলাচলের প্রথম উদ্যোগ, সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ তো আগে থেকেই অনিয়মিতভাবে চলাচল করছে।
সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি