বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা বারবার ঘটছে, যার ফলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতার প্রশ্ন উঠছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। এই পরিস্থিতিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একজন প্রধান নেতা, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইসকন কলকাতার সহ-সভাপতি রাধারমন দাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশে হিন্দুদের অধিকার রক্ষার জন্য সমাবেশ করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করা হয়েছে। ঢাকা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, যিনি "চিন্ময় প্রভু" নামেও পরিচিত, পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের বর্তমান মুখপাত্র। তিনি বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা এবং সমাজ সংস্কারক হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের ৮ দফা দাবি নিয়ে বেশ কয়েকটি বড় সমাবেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সমাবেশগুলোতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সমস্যা ও তাদের অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো উঠে এসেছেসোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আরও ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। এই মামলায় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়াও গত ৫ই নভেম্বর চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে হিন্দুদের দোকানে সেনাবাহিনী কর্তৃক অভিযান চালানো হয়। এই ঘটনার সূত্রপাত হয় ওসমান আলি নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট থেকে। তিনি ইসকনকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে অভিহিত করে একটি পোস্ট করেন, যা হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
পোস্টটির প্রতিবাদে হাজারী গলিতে মিয়া শপিং সেন্টারের সামনে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জড়ো হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় । পুলিশ ওসমান আলিকে দোকান থেকে উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেয় এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে বলে জানানো হয়।
পরে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী হাজারী গলিতে অভিযান চালায় এবং হিন্দুদের দোকানে ঢুকে ওপর লাটিচার্জ এবং নির্বিচারে হাজারি গলির বহু হিন্দুদের আটক করা হয়। এসময় সাধারণ হিন্দু পথচারীদেরও ছাড় দেয়নি সেনাবাহিনী। এছাড়াও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা চালানো হয় এবং দোকানের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।।
পরবর্তীতে পুলিশ একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে হাজারী গলিতে গিয়ে দোকানগুলি খুলে দেয়। তবে হিন্দু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের দোকানের সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক নিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জোর করে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।
সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি