২০২২ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের মতোই, এবারও কাঠমান্ডু উৎসবমুখর। দুই বছর আগে, বাংলাদেশ নারী দলকে হারিয়ে নেপাল শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাংলাদেশী মেয়েরা তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল।
বিমানবন্দরে ছাদখোলা বাসে বাফুফে ভবনে আসা খেলোয়াড়দের সেই উচ্ছ্বাস এখনও দেশবাসীর মনে সতেজ। প্রশ্ন হচ্ছে, এবারও কি একই উৎসবের সাক্ষী থাকবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ নারী দলের সামনে এবার শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। দুই বছর আগে দশরথ রঙ্গশালায় ২০ হাজার দর্শকের সামনে তারা যে জয়লাভ করেছিল, সেই মুহূর্ত আবার ফিরিয়ে আনতে চাইবে তারা।
আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শুরু হবে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দেখা যাক, বাংলাদেশের মেয়েরা আবারও ইতিহাস রচনা করতে পারে কি না।
দীপাবলির আগমনে কাঠমান্ডুর রাজপথগুলোতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। নেপাল যদি আজ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়, তাহলে এই উৎসব আরও বড় আকার ধারণ করবে। শিরোপা জয়ের আশায় কাঠমান্ডুবাসী উচ্ছ্বসিত।
স্বাগতিক নেপাল দল দারুণ ফর্মে রয়েছে। সেমিফাইনালে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে তারা ফাইনালে উঠেছে। নেপালের তারকা খেলোয়াড় সাবিত্রা ভান্ডারি ফরাসি ক্লাবে খেলেন এবং তিনি ফাইনালে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন। অন্যদিকে, রেখা পৌডেলের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তির।
বাংলাদেশ দলও আত্মবিশ্বাসী। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন জানিয়েছেন, তারা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এবং ফাইনাল জিততে চায়।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেপাল একটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০১০ সাল থেকে এই দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে। প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন নেপালকে হারাতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স উন্নতি হয়েছে এবং তারা নেপালকে হারাতে সক্ষম হয়েছে।
এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুই দলের মধ্যকার ম্যাচটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের খেলোয়াড়রা টাইব্রেকারে দক্ষ হওয়ায় বাংলাদেশ দল ৯০ মিনিটের মধ্যেই ম্যাচ জিততে চাইছে। কোচ পিটার বাটলারও ম্যাচ জয়ের উপর জোর দিয়েছেন। তবে তিনি নেপাল দলের দলীয় ঐক্যের প্রশংসা করেছেন।
আজকের ফাইনালকে সামনে রেখে দুই দলের কোচ ও অধিনায়কের মন্তব্য থেকে উঠে এসেছে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব। বাংলাদেশ ও নেপাল দলের কোচ ও অধিনায়করা দশরথ রঙ্গশালায় এক সাথে উপস্থিত হয়ে ম্যাচের আগে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়েছেন।
নেপালের অধিনায়ক অঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা আজকের ম্যাচকে ‘প্রতিশোধের ম্যাচ’ হিসেবে দেখতে চান না। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, আগের সাফ ফাইনালগুলোতে হেরে যাওয়ার ব্যথা এখনও তাদের মনে রয়েছে। তিনি আশা করছেন, আজ তাঁরা সেই ব্যথার অবসান ঘটাতে পারবে।
অন্যদিকে, নেপালের কোচ রাজেন্দ্রা তামাং বাংলাদেশ দলকে নিয়ে সতর্ক। তিনি মনে করেন, ইংলিশ কোচের অধীনে বাংলাদেশ দল অনেক উন্নতি করেছে এবং তাদের খেলার ধরন ইংলিশ ফুটবলের মতো। তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে, ঘরের মাঠের সুবিধা তাদের পাশে থাকবে।
বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকেও আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য করা হয়েছে। দুই দলের মধ্যে কঠিন লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নেপালের কোচ রাজেন্দ্রা তামাং কাঠমান্ডুকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ শহর হিসেবে দেখছেন। তিনি জানেন, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের সাক্ষী এই শহর। ১৯৯৯ সালে সাফ গেমস ফুটবলে সোনা জেতা এবং ২০২২ সালে নারী সাফ জেতা— এই দুইটি সাফল্যই বাংলাদেশকে কাঠমান্ডুতে মিলেছে। তাই নেপালের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশকে নিয়ে সতর্ক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন রাজেন্দ্রা।
সিলেট ২৪ বাংলা/ বিডিবি