Cyclone “Dana” Update: ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সর্বশেষ আপডেট কি? জেনে নিন বিস্তারিত_ সিলেট ২৪ বাংলা সিলেট ২৪ বাংলা প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৪ ‘ঘূর্ণিঝড় দানা’ আবহাওয়াঃ ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও শক্তিশালী হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ মধ্যরাতের মধ্যে এটি ভারতের ওড়িশা ও পশিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও এর প্রভাব পড়বে। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, “টেরিটোরিয়াল ইফেক্টের” কারণে আমাদের দেশের এই অঞ্চলে বেশ ঝড়ো হাওয়া বইবে এবং বৃষ্টিপাত হবে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগও ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। দানা কখন আঘাত হানবে? ঘূর্ণিঝড় দানা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানার পূর্বাভাস রয়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি আজ রাত থেকে আগামীকাল সকালের মধ্যে ওড়িশার পুরী ও সাগর দ্বীপের মধ্য দিয়ে ভারতের উপকূল অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার হতে পারে এবং সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর খুবই উত্তাল অবস্থায় রয়েছে। ফলে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে। ঘূর্ণিঝর দানার পূর্বপ্রস্তুতি কি? ঘূর্ণিঝড় দানা বরিশাল ও খুলনা বিভাগগুলোকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা থাকায় এসব এলাকায় বিস্তৃত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী জানিয়েছেন, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলাগুলোতে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে এবং অন্যান্য জেলাগুলোতে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বিভাগের সকল জেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বরিশালে ৫৪১টি, ভোলায় ৮৬৯টি, পিরোজপুরে ৫৬১টি, ঝালকাঠিতে ৮৮৫টি এবং পটুয়াখালীতে ৬৭৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। তবে, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মহাবিপদ সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী নয়। খুলনা জেলায়ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, দানার ফলে বাংলাদেশে খুব বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উভয় বিভাগেই স্বেচ্ছাসেবক, নগদ অর্থ, খাদ্যসামগ্রী এবং মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিভাবে ‘দানা’ নামকরণ করা হয়? আমরা প্রায়ই শুনি, কোনো ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘দানা’, ‘ফণী’ বা অন্য কোনো নাম। কিন্তু এই নামগুলো আসে কোথা থেকে? এই নামকরণের পেছনে আছে একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। কোন দেশ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়? বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় হয়, সেগুলোর নামকরণের দায়িত্ব নেয় একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল। এই প্যানেলে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইরান, কাতার, ইয়েমেন, ওমান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সদস্য। এই দেশগুলো প্রতি চার বছরে একবার বৈঠক করে পরবর্তী চার বছরের জন্য ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা তৈরি করে। সাধারণত দেশের নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়। যেমন, কাতার দেশের দেওয়া নাম ‘দানা’। ‘দানা’ একটি আরবি শব্দ যার অর্থ ‘বড় মুক্তার দানা’। কাতার দেশ এই নামটি নির্বাচন করেছে। অক্টোবর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা কেমন? বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আসা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। আবহাওয়াবিদরা জানান, আমাদের দেশে প্রতি বছর মার্চ, এপ্রিল, মে এবং অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর এই দুটি মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই মৌসুমগুলোকে ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম বলা হয়। এই মৌসুমগুলোর মধ্যে অক্টোবর মাসকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৮৯১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অক্টোবর মাসে মোট ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টিই ছিল অতি প্রবল। আর এই সব ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ১৯টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। গত বছর, ২০২৩ সালে অক্টোবর মাসেই ‘হামুন’ নামে একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রাম উপকূলের দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করেছিল। এর আগের বছরও ‘চিত্রা’ নামে একটি ঘূর্ণিঝড় এই মাসেই তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে আমরা যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’, সেটিও এই একই প্রবণতারই একটি অংশ। অক্টোবরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় সাগরের পানির তাপমাত্রা এবং অন্যান্য আবহাওয়ীয় পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় তৈরির পক্ষে অনুকূল থাকে। এই কারণেই অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকি বেশি থাকে। আমাদের সকলকেই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবে। ঘূর্ণিঝড় আসার আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা জরুরি। আশ্রয়কেন্দ্র, খাবার, পানি ইত্যাদি সব কিছু আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশাবলী মেনে চললে এবং অন্যদের সাহায্য করলে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতি কমাতে পারব। মনে রাখতে হবে, ঘূর্ণিঝড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা এটাকে সম্পূর্ণভাবে রোধ করতে না পারলেও, আগে থেকে প্রস্তুত থাকার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারি। সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি SHARES আবহাওয়া বিষয়: আবহাওয়াআবহাওয়া সংবাদঘূর্ণিঝড়ঘূর্ণিঝড় দানাঘূর্ণিঝড় দানার সর্বেশেষ আপডেটদানা