Law Reports Forrum: ল রিপোর্টার্স ফোরামের সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব, বিস্তারিত বিশ্লেষণ সিলেট ২৪ বাংলা সিলেট ২৪ বাংলা প্রকাশিত: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ল রিপোর্টার্স ফোরামের সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব_বিস্তারিত বিশ্লেষণ আইন আদালতঃ ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) বাংলাদেশের সংবিধানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করেছে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, একটি হবে জাতীয় পরিষদ (উচ্চকক্ষ) এবং অপরটি হবে জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ)। আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য একটি আলোচনা সভায় এই প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, জাতীয় সংসদে ৩০০টি আসন থাকবে এবং নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে। অন্যদিকে, জাতীয় পরিষদে ২০০টি আসন থাকবে এবং এখানে নির্বাচন হবে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, একটি দল যত বেশি ভোট পাবে, তারা তত বেশি আসন পাবে। জাতীয় পরিষদে ২৫টি আসন সংরক্ষিত থাকবে নারীদের জন্য। এই আসনগুলো দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। এছাড়া, রাষ্ট্রপতি ১০ জন নারীকে এই পরিষদে মনোনয়ন দেবেন, যাদের মধ্যে উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত আসন থাকবে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে এই সংসদে ১০% নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) দ্বারা প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারের খসড়ায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ধারণা। প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমান এককক্ষবিশিষ্ট সংসদের পরিবর্তে একটি উচ্চকক্ষ (জাতীয় পরিষদ) এবং একটি নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) থাকবে। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের অর্ধেক যদি প্রয়োগ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে। এই ক্ষেত্রে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে এমন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাবে না। আগামীকাল সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এই খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হবে। দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সভাপতি সালেহ উদ্দিন খসড়া প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন। এতে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করবেন। ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।এছাড়া, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানসহ দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞরা আলোচনায় অংশ নেবেন। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি আইনসভা থাকবে বলে জানানো হয়। জাতীয় সংসদ হবে এই আইনসভার নিম্নকক্ষ। এখানে সদস্যরা প্রচলিত ভোটের পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে এবং মোট আসন সংখ্যা নির্ধারিত হবে। জাতীয় পরিষদ হবে এই আইনসভার উচ্চকক্ষ। এখানে সদস্যরা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। জাতীয় সংসদ সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা আইনসভার ওপর ন্যস্ত হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জাতীয় পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই পরিষদটি দেশের বিভিন্ন স্তরের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় পরিষদে মোট ২০০ জন সদস্য থাকবে। এই সদস্যরা বিভিন্ন শ্রেণি থেকে আসবেন, যার মধ্যে রয়েছে: স্থানীয় সরকার প্রধান: ৬৪ জন নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ১২ জন নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের মেয়র সরাসরি জাতীয় পরিষদের সদস্য হবেন। এর ফলে স্থানীয় স্তরের জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে স্থানীয় সমস্যাগুলো সরাসরি উত্থাপিত হতে পারবে। নারীদের সংরক্ষণ: ২৫টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এটি নিশ্চিত করবে যে নারীরাও জাতীয় পরিষদে যথাযথভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং নারীদের মুখপাত হিসেবে কাজ করবে। বিশেষ প্রতিনিধিত্ব: ১০টি আসন উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এতে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে এবং তাদের সমস্যাগুলো জাতীয় পর্যায়ে উত্থাপিত হতে পারবে। প্রস্তাবিত সংবিধানে জাতীয় পরিষদের ক্ষমতা ও গঠন সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিধান রয়েছে: সদস্যদের যোগ্যতা ও নির্বাচন: জাতীয় পরিষদের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যা যদি বেজোড় হয়, তাহলে অতিরিক্ত সদস্যকে কোন পেশার ব্যক্তি হবে তা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল নির্ধারণ করবে। এছাড়া, রাষ্ট্রপতি ১০ জন সদস্যকে সরাসরি মনোনয়ন করবেন। এই মনোনয়নে উপজাতি, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় পরিষদের ক্ষমতা: জাতীয় পরিষদ হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা। এটি অর্থনৈতিক নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং জাতীয় ঐক্য সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করবে। জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আইনগুলো জাতীয় পরিষদের অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে। জাতীয় বাজেটের ক্ষেত্রে, জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের ছয় মাস আগে জাতীয় পরিষদে প্রাক-বাজেট আলোচনা হবে এবং তারপর সরকার বাজেটের খসড়া প্রণয়ন করবে। মেয়াদ: জাতীয় পরিষদের মেয়াদ চার বছর হবে এবং জাতীয় সংসদ গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে জাতীয় পরিষদ গঠন সম্পন্ন করতে হবে। প্রস্তাবিত সংবিধানে জাতীয় সংসদের ক্ষমতাঃ প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকবে এবং সংবিধানের নিয়মাবলি জাতীয় পরিষদের অনুমোদনের সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের ওপর ন্যস্ত হবে। একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে এই সংসদ গঠিত হবে। সদস্যরা সংসদ-সদস্য বলে অভিহিত হবে। তারা রাজনৈতিক দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হতে পারবেন সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি SHARES আইন আদালত বিষয়: আইনআদালতআলোচনা সভাজাতীয় পরিষদজাতীয় সংসদদ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাবাংলাদেশ সংবিধানল রিপোর্টার্স ফোরামসংবিধান