আজ (২৩ অক্টোবর, বুধবার) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কোনো আলোচনা হয়নি। এটি একটি রুটিন আলোচনা। আমরা পর্যায়ক্রমে সরকারের বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে আলোচনা করছি। এ আলোচনা চলতে থাকবে।
এসময় তার কাছে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তীতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এখনও এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি"।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রজোট সহ আরও কয়েকটি সংগঠন রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। বঙ্গভবনের সামনে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত চলেছে বিক্ষোভ এবং হাঙ্গামা। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে কোনো আন্দোলনকারীকে জড়ো হতে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
এ বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ''আমাদের অবস্থান তো আপনারা দেখছেন, যারা বিক্ষোভ করছে তারা যেন বঙ্গভবনের আশপাশ থেকে সরে যায় সেটার জন্য বলেছি। বঙ্গভবনের সিকিউরিটি বাড়িয়েছি।''
গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। এর আড়াই মাস পর রাষ্ট্রপতির কথাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয় । দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার কাছে নেই।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এরপর মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রাষ্ট্রপতির বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তেব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার একমত।
নাহিদ ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আইন উপদেষ্টা মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বুধবার যমুনায় গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধি দল। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সেই বৈঠকে। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ''কালকে উনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) জানিয়েছিলেন উনারা আজকে আসবেন। এর আগেও এরকম অনেক সংলাপ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রচুর কথা হচ্ছে। এটার অংশ হিসেবে আজকে বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো ডেভলপমেন্ট হলে আপনারা জানবেন।”
রাষ্ট্রপতির বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কী কথা হয়েছে তা জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, “বিএনপি তো বের হয়ে আপনাদের ব্রিফিং করেছে, সেটা তাদের জিজ্ঞেস করবেন, আমাদের তরফ থেকে আমরা একই কথা বার বার বলছি যে, রাজনৈতিক দল আমাদের অংশীজন তাদের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো সংলাপ হচ্ছে, এটা চলমান ডায়লোগ, সেটার অংশ। যদি কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয় সেটা আমরা জানিয়ে দেব।''
মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার অসুস্থতার গুজব নিয়েও কথা বলেন তার প্রেস সচিব। তিনি জানান, ''আমরা প্রচুর কল পেয়েছি, প্রফেসর ইউনূসের স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকে ইনকোয়ারি করেছেন। আমরা জানাতে চাই, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং ভালো আছেন। প্রতিদিনই তিনি মিটিং করেন, তার ছবি দিচ্ছি আমরা। কালকেও অনেকগুলো মিটিং করেছেন। আজকেও তিনি বিএনপির সঙ্গে মিটিংয়ে ছিলেন।''
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে বিতর্ক প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর কীভাবে দেখছে?– এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ''আইন উপদেষ্টা সরকারের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে, আমরা বলেছি উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছে সেটার সঙ্গে আমরা একমত।''
সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি