যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসা ব্যাক্তিদের মধ্যে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নতুন প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড অন্যতম। ট্রাম্প তাকে এই পদের জন্য নির্বাচিত করেছেন।
তুলসি গ্যাবার্ড একজন দৃঢ় ট্রাম্প সমর্থক। তিনি হাওয়াই রাজ্যের সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান। যদিও তার নাম ভারতীয়, ভারতের সঙ্গে তুলসির কোনও বংশগত সংযোগ নেই; তিনি মূলত একজন আমেরিকান হিন্দু এবং মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের প্রথম হিন্দু সদস্য।
তুলসির জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সামোয়ায়। বর্তমান বয়স ৪৩ বছর। ২১ বছর বয়স থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়, এ সময় তিনি হাওয়াই হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ৪২তম জেলা থেকে সদস্য নির্বাচিত হন।
তুলসি গ্যাবার্ড হাওয়াইয়ের চারবারের কংগ্রেস সদস্য। তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল তার বাবা মাইক গ্যাবার্ড, যিনি হাওয়াই স্টেট সিনেটর ছিলেন। মাইক গ্যাবার্ড রিপাবলিকান থেকে ডেমোক্র্যাটে যোগ দেন।
২০১২ সালে ১১৩ তম কংগ্রেসে তুলসি রিপাবলিকান প্রার্থী কাওভিকা ক্রাউলিকে পরাজিত করে ইউএস হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন জিতেন। এ নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ১,৬৮,৫০৩ ভোট (৮০.৬ শতাংশ), আর ক্রাউলি পেয়েছিলেন ৪০,৭০৭ ভোট (১৯.৪ শতাংশ)।
এভাবে, তুলসি কংগ্রেসে প্রথম হিন্দু হিসেবে নির্বাচিত হন, এবং একই সঙ্গে প্রথম আমেরিকান সামোয়ান সদস্যও হন।
তুলসি সনাতন ধর্মাবলম্বী, তাই তার প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি ভগবৎ গীতার ওপর শপথ নেন। শপথ নেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, “আমি বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী।”
তুলসি গ্যাবার্ড ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন। তবে দুই বছর পর তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ‘অভিজাত যুদ্ধে আগ্রহী গোষ্ঠী’ প্রবল হয়ে উঠেছে এবং দলটিকে ‘উইওক’ মতবাদীরা নিয়ন্ত্রণ করছে।
এরপর, ২০২২ সালে তুলসি রিপাবলিকান পার্টিতে যোগদান করেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করার পাশাপাশি রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেন।
তুলসীর কর্মকাণ্ডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে কলেজ টিউশন এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণের মতো উদারনৈতিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তুলসি গ্যাবার্ডের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তবে তিনি আর্মি রিজার্ভের লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং ইরাকে সামরিক সেবা দিয়েছেন।
আর এসবের মধ্যেই ট্রাম্প তাকে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছেন!
তাকে নির্বাচন করার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘দুই দশকের বেশি সময় ধরে তুলসি আমেরিকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি উভয় পক্ষের ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছেন, এখন তিনি গর্বিত রিপাবলিকান!’
জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসি গ্যাবার্ড ১৮টি গুপ্তচর সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন এবং ৭৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেট তদারকি করবেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সিআইএ, এফবিআই এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) অন্তর্ভুক্ত থাকবে তার তত্ত্বাবধানে।
সিলেট ২৪ বাংলা/বিডিবি